Wednesday 13 February 2019

বাংলা ভাষার বিকৃতি

বাংলা লেখা, বানান ও উচ্চারণে বিকৃতি আমাকে মাঝে মাঝে ভাবিয়েছে | আমি ভাষার ব্যাপারে একটু purist  আছি, অতএব এই বিকৃতি আমার পছন্দ হবার কথা নয়, হয়ওনি  | সম্প্রতি টুইটারে এ সম্বন্ধে দুই-একজনের একটু উৎসাহ দেখে মনে হল, এসম্বন্ধে একটু আলোচনা করা যেতে পারে | তাই এই ব্লগ |

কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশী বাংলায় ব্যবহৃত ফার্সী ও আরবী শব্দের অনুপ্রবেশের ফলে এই ঘটনা ঘটেছে | কেউ বলেন হিন্দি শব্দের অনুপ্রবেশের ফলে |

আমি একমত নই | বস্তুত বাংলাদেশী বাংলা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলার সম্পর্ক ইংরাজের ইংরেজি ও মার্কিন ইংরেজির মধ্যে যা অনেকটা তাই | ইংরাজের ইংরেজিতে অনেক কথা আছে যা মার্কিনরা বোঝেই না, যেমন 'fortnight' অথবা 'queue' | তেমনি বাংলাদেশী বাংলার শব্দ 'আহাজারি' (=শোকপ্রকাশ), 'এন্তেকাল' (=মৃত্যু), 'ফযর' (=সকাল)  পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির বোধগম্য নয় | বস্তুত ইংরাজের ইংরেজি ও মার্কিন ইংরেজি যেমন একই ভাষার দুটো আলাদা ধারা, বাংলাদেশী বাংলা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলাও তাই |

ভাষায় বিকৃতির মূল কারণ আমার মনে হয় হিন্দি বা ইংরেজি থেকে আক্ষরিক অনুবাদ, অথবা একই হিন্দি ও বাংলা শব্দের অর্থের পার্থক্য অনুধাবন না করা |  প্রথমটির উদাহরণ হিন্দি "दो खरीदिये, तीन पाइये" বাংলা অনুবাদ "দুটি কিনুন, তিনটি পান" | 'পান'-এর জায়গায় 'পাবেন' বললে সেটা অনেক ভালো বাংলা হত | দ্বিতীয়টির উদাহরণ হিন্দি 'अंतिम' এবং 'आलोचना' |  দুটি শব্দই বাংলায়ও আছে | এর মধ্যে প্রথমটির মানে দুই ভাষাতেই 'শেষ' | কিন্তু হিন্দি শব্দটি খুব সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়, যেমন "अगला और अंतिम स्टेशन टालीगंज" | অপরপক্ষে বাংলা শব্দটি মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত | তেমনি হিন্দি  'आलोचना' মানে বাংলায় 'নিন্দা' | এগুলো না বুঝলে বিকৃতি অবশ্যম্ভাবী |

আর একটা বিকৃতি হল সোজা ভুল | একটি যাত্রার বিজ্ঞাপনে একবার দেখেছিলাম "ডাক্তার অমুক, মেডিসিন ট্রলারের উপর প্রেসক্রিপশন লিখছেন | বিজ্ঞাপনদাতা বলতে চেয়েছেন 'মেডিসিন ট্রলি', কিন্তু ইংরাজিজ্ঞানের অভাবে ভুল শব্দ ঢুকে গেছে | 'ট্রলার'  মানে মাছ ধরার জাহাজ | এগুলি বিজ্ঞাপনের কপিরাইটারের ভুল | আজকাল ভাষা শিক্ষা এবং ব্যবহার কোথায় নেমে গেছে এটি তার একটি উদাহরণ |

পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গেও বাংলা ভাষার বিকৃতির সম্পর্ক আছে | ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনে রাজ্যের একটাও ক্ষেত্রে নেই যেখানে অধোগতি হয় নি | বর্তমানেও সেই tradition সমানে চলেছে | এই অবস্থায় রাজ্যের বিদ্বান বুদ্ধিমান লোক যে রাজ্যে থাকবেন না সেটাই স্বাভাবিক | এর প্রতিফলন ভাষায়ও পড়তে বাধ্য | 

বিকৃতির নিশ্চয়ই আরো গূঢ় কারণ আছে | এ বিষয়ে কেউ আলোকপাত করলে আমি উপকৃত হব |