Thursday 16 April 2015

পশ্চিমবঙ্গ ও মমতা : পরিস্থিতি ও পরিণাম 
মমতা কী চান? তার রাজনীতির আসল স্বরূপ কি? তার সাফল্যের পিছনে রহস্য কি ? সাফল্য সম্বন্ধে তিনি যেখানে নিশ্চিত সেখানে এত মারপিট করাচ্ছেন কেন? এই গুটিকতক প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টায় এই পোস্ট |
মমতার রাজনীতি মূলতঃ খুব সরল | মমতার চাহিদা দুটি | প্রথম, যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতায় টিকে থাকা | দ্বিতীয়, দলের রাশটি একশ শতাংশ নিজের হাতে রাখা | দুটির মধ্যে কোনটি ওঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা আমি বলতে পারব না | কিন্তু এ দুটি ছাড়া মমতার আর কোনো চাহিদা নেই – অতএব বালাইও নেই | বাজার অর্থনীতি ভাল না রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প ভাল, পশ্চিমবঙ্গে শিল্প আসবে কি আসবে না, না এলে ক্রমবর্ধমান বেকারী কি করে ঘোচানো যাবে, নেতাজী সুভাষচন্দ্রের শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল – এ সব নিয়ে ওঁর বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই | ক্ষমতায় থাকা ওঁর কাছে কোনো means to an end নয়, পাকাপাকিই end | ক্ষমতায় থেকে উনি জেলায় জেলায় শুধু শুধু ঘুরবেন, আর মাঝে মাঝে ফিল্মস্টার নিয়ে নাচনকোন্দন করবেন – এগুলো সম্ভবত ওঁর ছোটবেলার অবদমিত আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ |
তা হলে ওঁর সাফল্যের পিছনে রহস্য কি? এটাও খুব সরল – এক কথায় ঘুষ | পশ্চিমবঙ্গের ২৭% মুসলিম জোট বেঁধে ভোট দেন – অতএব এদের সোজাসুজি ঘুষ দিতে হবে | এই মুসলিমদের একটা বড় অংশ অর্ধসাক্ষর বা নিরক্ষর, মসজিদের ইমামদের কথায় চলেন -- অতএব ইমামদের আরো বড় ঘুষ দিতে হবে | সঙ্গে সঙ্গে যাতে এঁরা ইমামদের খপ্পরে থাকেন, নিজেরা স্বাধীন চিন্তাভাবনা করবার সুযোগ না পান, সেইজন্য এঁদের সাধারণ স্কুলে না পড়িয়ে মাদ্রাসায় পড়ার উপর জোর দিতে হবে | পাড়ার ক্লাবগুলোতে বেশির ভাগ সাধারণ ঘরের বেকার ছেলেরা আড্ডা মারে, এদের আর কোথাও যাবার নেই, কিছু করবারও নেই -- তাই ক্লাবগুলোকে ঘুষ দিতে হবে |
এই সঙ্গে মমতা এও উপলব্ধি করেছেন, যে খানিকটা মারধর, খুনজখম না করলে, এবং পুলিশ-প্রশাসনকে অপব্যবহার না করলে, বিরোধী দলগুলো তাঁর এই ঘুষতত্ত্ব  নিয়ে এত চেঁচামেচি করবে যে ব্যাপারটা সাধারণ মানুষ বুঝেও ফেলতে পারেন | তাই এগুলো করতে হবে, সঙ্গে পুলিশকে দিয়ে কেস খাওয়াতে হবে | যাতে বিরোধীদের চুপ করিয়ে রাখা যায় | তাছাড়া, কিছু খুনখারাপি না করলে সিপিএম থেকে আসা লুম্পেন গুলো করবে কি? ওদেরকে ব্যস্ত রাখতে হবে তো!তা না হলে তো এরা নিজেদের মধ্যেই মারামারি আরম্ভ করে দেবে – ১৬ ই এপ্রিল কাশীপুরে যা করেছিল!
এই সব করতে গিয়ে রাজ্যে জনকল্যানের জন্য নির্দিষ্ট টাকা ঘুষ খাতে খরচ হয়ে গেল কি না, মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা অংশ মৌলবাদী বা দেশবিরোধীদের খপ্পরে পড়ছেন কি না, ক্লাবের ছেলেগুলোর সারাটা জীবন কি এইভাবেই কাটবে, এরা বিয়ে-সাদী করবে না, সংসার করবে না -- এই সব বিষয়ে মমতা চরম উদাসীন | ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে, আর কিচ্ছুতে কিচ্ছু এসে যায় না |
এর সঙ্গে দলের রাশটি একশ শতাংশ, এক হাজার শতাংশ, নিজের হাতে রাখতেই হবে | সেটা করার জন্য মমতার ফর্মুলা -- substandard লোককে কাছাকাছি রাখতে হবে, উঁচু পদ দিতে হবে | মমতার চেয়ে একচুলও বেশি পদার্থ যাঁর মধ্যে আছে তাকে নির্মমভাবে ছেঁটে ফেলতে হবে, নিদেনপক্ষে ক্ষমতার থেকে দূরে রাখতে হবে | এই নীতির (যদি একে নীতি বলা যায়) চরমতম প্রকাশ দেখা গিয়েছিল ২০০৫ সালে সুব্রত মুখার্জির বিতাড়নে | সুব্রতর অপরাধ, তিনি মেয়র হিসেবে ভাল কাজ করেছিলেন, কলকাতা পুরসভাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করেছিলেন | সুব্রত বিতাড়িত হবার পর বলেছিলেন, মমতার প্রধান দোষ হচ্ছে প্রচন্ড পরশ্রীকাতরতা | আর এই একই নীতির প্রকাশ দেখা যাচ্ছে পার্থ চ্যাটার্জি আর ফিরাদ হাকিমের উঠে আসার মধ্যে – এই দুই substandard নেতা আজকে মমতার মন্ত্রীসভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী|
মুসলিম ভোটের লোভে ঘুষ দেবার ব্যাপারে উল্লেখ্য, এই দোষে সিপিএম ও কংগ্রেস ও অল্পবিস্তর দোষী | কিন্তু তারা এতটা চোখের চামড়াহীন হতে পারে নি | মারধর, খুনজখম এবং পুলিশ-প্রশাসনকে অপব্যবহার মমতা সিপিএমের কাছ থেকে ভালই শিখেছেন | আগে বলতাম মেধাবী ছাত্রী, এখন গুরুমারা চেলা বলতেও আপত্তি নেই | কারণ সিপিএম-ও গোড়ার দিকে সাইবাড়ি আনন্দমার্গী করলেও শেষের দিকে খানিকটা রাশ টেনে রেখেছিল – যদিও একেবারে শেষ লগ্নে নেতাইকান্ড করেছে কিন্তু মমতার ওই বালাই নেই | এর নাম extreme cynicism | এই জিনিষটা লালু যাদবের আছে, কিন্তু মমতা বোধ হয় তাঁকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন |
বাঙালির অভিশাপের আর একটি চেহারা ছিল সিপিএম বা বামফ্রন্ট | এদের ৩৪ বছরের অত্যাচারের হাত থেকে বাঙালিকে উদ্ধার করে নিজের খপ্পরে এনে মমতা মানুষের কাছ থেকে খানিকটা সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছেন | এখন যদি ধরে নেওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ  মমতায়ই  মজে থাকবেন তা হলে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য কি ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে? সংক্ষেপে জবাব হতে পারে এই :
১) সমস্ত শিল্পসম্ভাবনা জলাঞ্জলি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ আবার একটি প্রায়-পুরোপুরি কৃষিনির্ভর অবস্থায় ফিরে যাবে |
২) যেহেতু শুধু কৃষি এই রাজ্যের সমস্ত মানুষকে কর্মসংস্থান দিতে পারবে না, সেইজন্য বেকারী ভয়াবহ আকার ধারণ করবে |
৩) এই ক্রমবর্ধমান বেকারদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ অপরাধের অন্ধকার জগতে চলে যাবে| তোলাবাজি ডাকাতি ও ধর্ষণ বাড়বে |
৪) রাজ্যে ইসলামীকরণ বাড়বে | কিছু কিছু জায়গায় হিন্দুদের থাকা দুঃসহ হয়ে উঠবে |
৫) পুলিশ-প্রশাসনের রাজনীতিকরণ সম্পূর্ণ হবে | অরাজনৈতিক মানুষের কোনো আশ্রয় থাকবে না | সাধারণভাবে একটি সম্পূর্ণ অরাজক অবস্থা তৈরী হবে
সৃষ্টিকর্তা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির কপালে কেন এমন দুটি  পদার্থ যাদের নাম সিপিএম ও মমতা -- লিখে দিয়েছিলেন তিনিই জানেন | সম্ভবত বাঙালিকে পরীক্ষা করার জন্য – বাঙালি এই রাজনীতিতে বশীভূত না হয়ে এর স্বরূপ চিনতে পারে কি না | পারবে মনে হয়?

1 comment:

  1. আমরা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙ্গালিরা কেটলির জলের মধ্যে থাকা নিশ্চিন্ত ব্যাঙ্গের মত । ১৯৪৬ থেকেই কেটলির তলায় আগুন জ্বলছে । পূর্ব পাকিস্তানে ফুটন্ত জল প্রচুর ব্যাং মরেছে, কিছু লাফিয়ে এই পশ্চিমবঙ্গে বা আসামের কাছার জেলায় গিয়ে বেঁচেছে । আসামেও আমাদের অনেকেরই কপালে ডি-ভোটার (Doubtful-voter) তকমা জুটেছে (এ আর এক বঞ্চনার ইতিহাস) । তবুও আমরা নিশ্চিন্তে আছি । উড়িষ্যা বা বিহারে এখন থেকেই জমি/বাড়ি দেখে রাখা উচিত । নাহলে ইহুদিদের মত আরও একবার কচুকাটা বা উৎখাত হওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা । জয় হিন্দ্‌...

    ReplyDelete